ঢাকা,শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪

দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে ঐতিহ্যবাহী ‘বাঁকখালী নদী’

মুহিববুল্লাহ মুহিব, কক্সবাজার ::
জৌলুস নেই, নেই প্রমত্তা ঢেউ। দখল আর দূষনের ফলে হয়েছে সরু থেকে সরুতর। পর্যটন জেলা কক্সবাজারের অর্থনীতির প্রাণ-প্রবাহ নামে খ্যাত ঐতিহ্যবাহী বাঁকখালী নদী আজ অস্থিত্ব সঙ্কটে। তবে সম্প্রতি সরকার এই নদী রক্ষায় উদ্যোগ নিলেও বেশিরভাগ জায়গা দখল হয়ে যাওয়ায় কচ্ছপ গতিতে চলছে ড্রেজিং প্রকল্প। তাই দ্রুত নদীটি দখলমুক্ত করার দাবী পরিবেশবাদীদের।
জানাযায়, এক সময় বড় বড় জাহাজ থেকে পণ্য উঠা-নামার একমাত্র ঘাট ছিল এই বাঁকখালী নদীর কস্তুরাঘাট পয়েন্ট। যেখানে হাজারো শ্রমিক এসব কাজ করতেন। ষাটের দশকের দিকে জাহাজে করে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্নস্থানে যাত্রী পরিবহনের একমাত্র অবলম্বন ছিলো এই নদী। অসংখ্য বাঁকে ভরা বলেই নদীটির নাম হয়েছিলো বাঁকখালী। তবে রাখাইন ইতিহাস বলছে, বাগোলী নামে এক বর্মি সেনা প্রধানের নাম থেকেই উৎপত্তি এই বাঁকখালী শব্দটির।
নদীটি কক্সবাজার শহর লাগোয়া হওয়ায় দু’পাশের বেশিরভাগ চরাঞ্চল দখল করে স্থাপনা গড়ে তুলেছেন প্রভাবশালীরা। এদের মধ্যে বসতবাড়ি বানিয়ে শীর্ষ দখলবাজের তালিকায় রয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল খালেক চেয়ারম্যান, পৌর বিএনপি’র সভাপতি রফিকুল হুদা চৌধুরী, ব্যবসায়ী মৌলভী ছালেহ আহমদ। এছাড়া জামায়াত নেতা জাহাঙ্গীর কাশেমের আল্লাহওয়ালা হ্যাচারী ও নাজিম উদ্দিন চৌধুরীর সাইনবোর্ড সম্বলিত প্যারাবন দখলসহ অসংখ্য রথি-মহারথির নাম আছে জেলা প্রশাসনের ৪শ’ জনের তালিকায়।
শহরের ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাট হচ্ছে নদীর উপরিভাগ। বছরের পর বছর বন্ধ হয়ে আছে স্লুইস গেইট। ফলে বর্ষা মৌসুমে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ে পর্যটন শহর।
অন্যদিকে এসব দখলদাররা প্রকাশ্যে তাদের দখল কাজ চালিয়ে গেলেও প্রশাসনের টনক নড়েনি। এনিয়ে এ ঐতিহ্যবাহী নদীটির অস্থিত্ব নিয়ে আশংকা দেখা দিয়েছে। নদীর চারপাশ দ্রুত দখলমুক্ত করা না হলে ক্রমান্বয়ে সরু হয়ে খালে পরিণত হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি দীপক শর্মা দীপু বলেন, এখনি যদি প্রদক্ষেপ নেয়া না হয় তাহলে বাঁকখালী নদী আর থাকবে না। প্রতিনিয়িত দখলদারা নিজেদের দখলে নিতে শুরু করেছে। এসব প্রভাবশালীর কাছে প্রশাসনও অসহায় বলে আমাদের ধারণা। না হলে তাদের উচ্ছেদ করতে পারছে না কেন।
কক্সবাজার সিভিল সোসাইটি সহ-সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার কানন পাল বলেন, এক দিকে উচ্ছেদ করে আসলে অন্যদিকে দখল করে বসে তারা। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া না হলে কোনকিছুই সম্ভব নয়।
পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান জানান, দখলদারদের একটি নোটিশ দেয়া হয়েছে। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তারা অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে না নিলে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। কোনভাবে বাঁকখালী নদী দখল করতে দেয়া হবে না। শহরের ময়লা আবর্জনার জন্য ডাম্পিং স্টেশন করা হচ্ছে। এটি চালু হলেই ময়লা ডাম্পিং স্টেশনে নিয়ে য্ওায়া হবে।
উল্লেখ্য যে, জেলার ৫টি প্রধান নদীর মধ্যে অর্থনীতির প্রাণ-প্রবাহ বলে খ্যাত এই নদীটি মিশে গেছে সাগরে। যার উৎপত্তি স্থল প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার।

পাঠকের মতামত: